ধর্মের গল্প বা ইতিহাস









ধর্মের গল্প বা ইতিহাস একটি বিস্তৃত ও বৈচিত্র্যময় বিষয়, যা মানব সমাজের উদ্ভব থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত মানবজাতির চিন্তা, বিশ্বাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এটি বিভিন্ন ধর্মের জন্ম, বিকাশ ও তাদের প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করে। এখানে ধর্মের মূল গল্পটি সংক্ষেপে বাংলায় তুলে ধরা হলো:

ধর্মের উদ্ভব

মানব ইতিহাসের শুরুতে, মানুষ প্রকৃতি এবং এর শক্তিগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল। বিদ্যুৎ, ঝড়, আগুন, পানি ইত্যাদিকে মানুষ ঈশ্বরীয় শক্তি বা দেবতাদের প্রতীক হিসেবে মানত। এই বিশ্বাস থেকেই পলিথেইস্টিক বা বহুদেবতাবাদী ধর্মগুলোর জন্ম।

প্রাচীন ধর্ম

প্রাচীন সভ্যতাগুলো যেমন মেসোপটেমিয়া, মিশর, হিন্দু উপমহাদেশ, চীন ও গ্রিসের ধর্মগুলো প্রধানত প্রাকৃতিক উপাদান এবং স্থানীয় দেবতাদের পূজার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। উদাহরণস্বরূপ:

  • মেসোপটেমিয়ায় ছিল "আনু" (আকাশের দেবতা) এবং "এনলিল" (বায়ুর দেবতা)।
  • মিশরে ফারাওরা ঈশ্বরের প্রতিনিধি বলে গণ্য হতেন।
  • ভারতবর্ষে বৈদিক ধর্ম থেকে হিন্দু ধর্মের বিকাশ ঘটে।

একেশ্বরবাদী ধর্মের জন্ম

প্রায় ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আব্রাহামিক ধর্মের সূচনা হয়, যার প্রথম ধাপ ছিল ইহুদি ধর্ম। ইহুদি ধর্ম থেকে খ্রিস্টধর্ম এবং ইসলাম ধর্ম উদ্ভূত হয়।

  • ইহুদি ধর্ম: এটি ছিল একেশ্বরবাদী ধর্মের প্রথম উদাহরণ, যা ঈশ্বরের সাথে আব্রাহামের চুক্তির উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে।
  • খ্রিস্টধর্ম: খ্রিস্টধর্ম যিশু খ্রিস্টের শিক্ষার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এটি প্রথম শতাব্দীতে রোমান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে।
  • ইসলাম: সপ্তম শতাব্দীতে ইসলামের সূচনা হয়। হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর উপর কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার মাধ্যমে ইসলামের বিকাশ ঘটে।

পূর্ব এশীয় ধর্ম

পূর্ব এশিয়ায় কনফুসিয়ানিজম, তাওবাদ এবং বৌদ্ধধর্মের মতো ধর্ম ও দর্শন জনপ্রিয় হয়।

  • বৌদ্ধধর্ম: গৌতম বুদ্ধের শিক্ষা অনুযায়ী এটি মূলত ভারতবর্ষে শুরু হলেও পরবর্তীতে চীন, জাপান এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।
  • তাওবাদ এবং কনফুসিয়ানিজম: এগুলো চীনে বিকাশ লাভ করে এবং মানবিক নৈতিকতা ও প্রাকৃতিক ভারসাম্যের উপর গুরুত্ব দেয়।

ভারতীয় উপমহাদেশের ধর্ম

ভারতবর্ষ ছিল বহু ধর্মের জন্মভূমি। হিন্দু ধর্ম, বৌদ্ধধর্ম, জৈনধর্ম ও শিখধর্ম এখানেই উদ্ভূত হয়েছিল।

  • হিন্দু ধর্ম: এটি বিশ্বের প্রাচীনতম জীবিত ধর্ম, যা বৈদিক যুগে উদ্ভূত।
  • বৌদ্ধ ও জৈন ধর্ম: বেদবিরোধী ধর্ম হিসেবে বুদ্ধ এবং মহাবীরের শিক্ষার মাধ্যমে বিকশিত হয়।
  • শিখধর্ম: ১৫শ শতাব্দীতে গুরু নানকের শিক্ষা থেকে উদ্ভূত হয়।

আধুনিক যুগে ধর্ম

ধর্ম এখনো মানবজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে আধুনিক যুগে বিজ্ঞান, যুক্তিবাদ এবং ধর্মনিরপেক্ষতার উত্থান ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুশীলনে বিভিন্ন পরিবর্তন এনেছে।

ধর্ম মানবতার ঐতিহাসিক যাত্রার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি মানুষের নৈতিকতা, সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে চলেছে এবং ভবিষ্যতেও প্রভাবিত করবে।

No comments:

Post a Comment